আমি
আমি যখন লোকটার মাথায় বাড়ি দিলাম লোকটা কোনো শব্দ ছাড়াই নিচে পড়ে গেলো। আমার খুব হাসি পেলো। একে কি বলে? সাইলেন্ট ডেথ? হাহা। পাগল পাগল লোকটা খুব দ্রুত আমার আপন হয়ে উঠেছিলো। আমি যখন কফি শপে একা একা ক্যাপোচিনো গিলতাম লোকটা হাঁ করে এদিকে তাকিয়ে থাকতো। আমি দারুন মজা পেতাম। এই চাহনি কোনো যুবকের হলে তাও উপভোগ্য হতো। কিন্ত বৃদ্ধ লোকের কৌতুহলী দৃষ্টি বড়ই পীড়াদায়ক। বেশি দিন সহ্য করা যায় না। একদিন তাই নিজেই তার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। হুট করে বলে ফেললাম
“ আমি কি আপনার সাথে বসতে পারি?! “
ভেবেছিলাম ভদ্রলোক হতচকিত হয়ে যাবে। কিন্তু না। উনি বেশ ধীরেসুস্থেই আমাকে অভিবাদন জানালেন।
.
.
আমরা কেউ কারো নাম জানতাম না। বাড়ি কোথায় কিংবা তার স্ত্রী এসব ব্যাপারে খুব কম ই কথা হতো। আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলতাম, উনি সভ্যতা। প্যারিসের সুন্দর অট্টালিকায় তার প্রেয়সীর সাথে অভিসারের কথা অকপটে বলে যেতেন উনি। আমিও আমার হাজবেন্ডের কথা বলতাম। আড্ডা চলত। সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। যেহেতু আমার মৃত স্বামী আমার দেরি করে বাড়ি ফেরা নিয়ে কিছু বলতে পারতো না কাজেই আমরা মাঝে মাঝে গভীর রাত পর্যন্ত একসাথে থাকতাম। গল্প করতাম। তারপর। তারপর একদিন উনি আমাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ছবি দেখালেন। আর বললেন,
“ জানোতো পিচ্চি মেয়ে, আমার বুড়ো বউকে তোমার কথা বলেছি। ও তোমাকে দেখতে চায়। “
.
আমি কিছুটা অবাক হলাম। হুট করে স্ত্রী এলো কোথ্থকে! তবু হাসিমুখে বললাম,
“সিউর। তা কবে দেখা হচ্ছে বলুন?”
“খুব জলদি ই..”
.
সাক্ষাতের পর আমি বাড়ি ফিরে গেলাম না। কে আছে আমার! ফুটপাথে হাঁটতে লাগলাম। আর সহ্য করা যায়না।
আমি বুড়োকে ফোন দিলাম।
“ আপনি প্লিজ জলদি কফিশপের বাইরে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি। একটু দরকার আছে।খুব আর্জেন্ট”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। তুমি ভয় পেয়োনা। আমি আসছি”
.
.
আমি ভয় পাইনি। পেছন থেকে বুড়োর ছোটো মাথাটায় আঘাত করতে ভয় পাইনি। কাঁতরে কাঁতরে বুড়ো যখন আমার দিকে তাকালো আমি দারুণ মজা পেলাম। আহ! একঘেয়ে দৃষ্টি টা বদলে গেছে এখন। এক জিনিস আমার আবার বেশি দিন ভালো লাগেনা।