বৃষ্টিবাদল
মাঝে মাঝে রাত বিরাতে আমার মাথায় ভুত চাপে। ঘুম এলেও ঘুমাইনা। জেদ চেপে বসে থাকি। গান শুনি। গল্প পড়ি। কখনো কখনো অযথাই কাঁদি। আমার মন খারাপ থাকেনা। আবার মন ভালো ও থাকেনা। ব্রাউন সুগারের মতো মনটা ও কেমন যেন হয়ে থাকে।
আমি খুব সুন্দর আস্তে করে কাঁদি। আমার রুমের সাথে থাকা ফ্যানটা ধুপধাপ আওয়াজ তুলে আমাকে ঝাড়ি দেয়। আমি তবু মনোযোগ হারাইনা। কাল হো না হো মুভির মতো আমিও হাসি কান্নায় মেতে থাকি। হাবিজাবি লিখি। কফি খাই। মাঝে মাঝে রাত বিরাতে আমার মাথায় ভুত চাপে। আমি ছন্নছাড়া হয়ে যাই।
পুরোনো দিনের কথা ভাবি। বইগুলো পড়িনা তবে তাদের কথাও ভাবি। কেউ বুঝে, কেউ বুঝেনা, কেউ বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে। আমি তবু থম মেরে থাকি।
নিজেকে ব্যর্থ প্রেমিক মনে হয়। বুড়িয়ে যাওয়া বৃদ্ধ মনে হয়। স্বামী হারা মধ্যবয়সী মহিলা মনে হয়। আমি নিজেকে কবিতা ভাবতে শুরু করি। কিন্তু আমার কবিতায় কোনো কবি থাকেনা। আমি তাই থম মেরে থাকি। নিজেকে কবিহারা মনে হয়। আমি চুপ করে থাকি। বাইরে কুকুরের হইচই শুনি। অন্যদিনের মতো এবার আর আমি ভয় পাইনা। কুকুরগুলো আপন সুরে ডাকতে থাকে। আমি তাদের আপন ভেবে ফেলি। ওদের আমার অসহায় লাগে। আমি চুপ করে পড়ে থাকি।
কখনো কখনো আমার স্ত্রী আমার গায়ে হাত দিয়ে আস্থা দেয়। আমি তার দিকে তাকাই না। পাত্তা দিইনা। আমার পুরোনো প্রেমিকাকে মনে পড়ে। আবার পেছনে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। আমি বুঝি ও কিছুই জানেনা। আমি জানাইনা। আমি ভাবি আমি ভালো আছি। খুব ভালো আছি। রিতা, আমার স্ত্রী তবু হাল ছাড়েনা।
আমি হাল ছেড়ে দেই। আমি ওকে আপন ভাবিনা।ওকে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে। আমি তবু জোর করে হাসি। রিতা কিছু না বুঝেই জিজ্ঞেস করে ফেলে
“চা খাবে?”
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ি। ওকে অসহ্য লাগে। একা থাকতে দিচ্ছেনা মেয়ে টা। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করি। রিতা কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে পাশ ফিরে শোয়। আমি আবার চোখ খুলি।
আমি কে। আমি কেন। আমি ভেবে কুল পাইনা। আমি রায়হান। কিন্তু রায়হান কি আমি?
আমি থম মেরে পড়ে থাকি। অসহায়ের মতো রিতাকে জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকি। রিতা কিছু বুঝে। কিছু বুঝেনা। কিংবা বুঝেও না বুঝার ভান করে পড়ে থাকে। রিতা ভালো আছে। আমি জানি রিতা ভালো আছে।